প্রকাশিত: Mon, Apr 3, 2023 1:50 PM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 12:10 PM

প্রথম আলো সবকিছু থেকে নিজের মুনাফা তুলে নিতে ভুল করে না

ফজলুল বারী  : আমরা যখন সাংবাদিকতায় আসি তখন জামায়াত-শিবিরের একটাই প্রকাশ্য পত্রিকা ছিলো দৈনিক সংগ্রাম। জামায়াত-শিবিরের সদস্য সমর্থকরাই এখানে কাজ পেতেন। আরও যারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সমর্থক তারা থাকতেন লুকিয়ে। এখনকার মতো সোশ্যাল মিডিয়া না থাকায় তাদের প্রকাশও সচরাচর ঘটতো না। প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি করা সাংবাদিকও ছিলেন কম। কারণ দলীয় সাংবাদিকদের পেশাদার সাংবাদিকরা পছন্দ করতেন না। 

কিন্তু জাতীয় প্রেসক্লাব দিনে দিনে দলীয় সাংবাদিকদের আস্তানায় রূপ নিলো। ত্রিশজন আওয়ামী লীগ ত্রিশজন বিএনপি এভাবে প্যানেলের নামে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে দলীয় সাংবাদিকদের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য করা হতো। এভাবে বিএনপির প্যানেল থেকে যুদ্ধাপরাধী কামারুজ জামান, কাদের মোল্লাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য করা হয়েছিলো। এদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো পর্যন্ত প্রেসক্লাব নেতৃত্ব কোনো ভূমিকা নেয়নি। গণজাগরণ মঞ্চের হুংকার শুনে পিঠ বাঁচাতে তড়িঘড়ি তখন তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। 

এখন অবশ্য জামায়াত-শিবিরের সাংবাদিক কোনো লজ্জার নাম নয়। শতশত সাংবাদিক তাদের এখন প্রকাশ্যে কাজ করছে। একবার শুনলাম জামায়াত শিবির দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়ে জনকণ্ঠ, প্রথম আলো, একাত্তর টিভির মতো পত্রিকা, মিডিয়াতেও লোক ঢোকাচ্ছে। এরা কারা কোথায় কাজ করছে তা অনেকটা এখন ওপেন সিক্রেট। প্রথম আলোর অনলাইনসহ বিভিন্ন বিভাগে তাদের শক্তিশালী প্রবেশ ও অবস্থানের কথা জানা যায়। গণজাগরণমঞ্চের চরিত্র হরণে প্রথম আলো যে ভূমিকা নিয়েছিলো তা পত্রিকাটির মানের সঙ্গে যায় না। তখন তাদের ভেতরের একটি সূত্র বলেছিলো, একজনের অসতর্কতায় কাজটি ঘটে গিয়েছিলো। 

এখন মাছ, মাংস, খেতে পারা না পারার সঙ্গে স্বাধীনতা সফল অথবা ব্যর্থ, এমন বিষয় কী প্রথম আলোর মান-মর্যাদার সঙ্গে যায়? তারা এ নিয়ে ভুল স্বীকার করেছে। ক্ষমা চায়নি। এসব দিন মজুর সংলাপ না উদ্দেশ্যমূলক বানানো এর প্রমাণও পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেনি প্রথম আলো। আমার একটি রিপোর্ট নিয়ে একবার বরিশালে মামলা হলো। মামলায় আমার সম্পাদক প্রকাশককে আসামী করা হয়নি। তখন বুঝতে পারি মামলাবাজরা পত্রিকার শ্রমিক পর্যন্ত ঘাটাঘাটির সাহস রাখে। প্রথম আলোর এই পর্বেও পত্রিকাটির সম্পাদক প্রকাশক বাদ দিয়ে একজন আঞ্চলিক রিপোর্টারের বিরুদ্ধে সাহস দেখালো সরকার। সম্পাদক খুব শান্তির সঙ্গে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।

প্রথম আলো সবকিছু থেকে নিজের মুনাফা তুলে নিতে ভুল করে না। এবারও তাই করেছে। ১/১১’র ভূমিকার কারণে পত্রিকাটি শেখ হাসিনার সরকারের শুরু থেকে দীর্ঘদিন নিজের আর্কাইভ লুকিয়ে রেখেছিলো। যেদিন থেকে তারা শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল ভাবতে শুরু করেছে তখন আর্কাইভ প্রকাশ্যে এনেছে এবং সরকারকে ফেলে দেবার দলেও যোগ দিয়েছে। চলতি ইস্যুতেও সরকারের সঙ্গে লোক কম। সাংবাদিকদের বড় অংশকেও সরকারের বিপক্ষে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মাঝখানে বলির পাঠা করা হয়েছে, একজন শ্রমজীবী আঞ্চলিক সাংবাদিককে।

 লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে